স্বদেশ ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘ ‘কোভিশিল্ড’ নামের করোনা টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ আজ সোমবার দেশে পৌঁছাবে। এ টিকা দেশে আনার পর ল্যাবটেস্ট করবে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ। ৫০ লাখ ডোজ টিকার চালান রাখা হবে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসে। এদিকে ঢাকার যে পাঁচ হাসপাতালে বুধবার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে, সেসব হাসপাতালে পূর্বপ্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি গতকাল সন্ধ্যায় বলেছেন, তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টিকার প্রথম চালানটি গ্রহণ করবেন। ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম চালান ভারতের পুনে থেকে সড়কপথে আসবে দিল্লিতে। পরে দিল্লি থেকে বিমানে ঢাকায় আনা হবে। পরে ভ্যাকসিন রাখা হবে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসে। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে (এ১২৫৪) ঢাকা পৌঁছাবে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। পরে সেখান থেকে টিকা সরাসরি নেওয়া হবে টঙ্গীতে বেক্সিমকোর নিজস্ব ওয়্যারহাউসে। ৫০ লাখ ডোজ টিকা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজের প্রথম চালান।
নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, চুক্তি মোতাবেক প্রতি মাসেই ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে মোট তিন কোটি টিকা ডোজ টিকা আসবে। সরকার এই টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জনগণকে প্রদান করবে। প্রতি ডোজ টিকা কিনতে সরকারের খরচ হয়েছে ৪ ডলার। বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউস থেকে টিকা নেওয়া হবে সরকারের ইপিআই ওয়্যারহাউসে। ইপিআই থেকে জেলায় জেলায় টিকা পাঠানো হবে। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিদিনের টিকা প্রতিদিন কোল্ড বক্সে করে পাঠানো হবে।
পাপন বলেন, সরকার জনগণকে বিনামূল্যে দিচ্ছে ভ্যাকসিন। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও সরকার দেখবে। ভারত থেকে সবচেয়ে কম মূল্যে ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ। জনসন অ্যান্ড জনসন ও নোভাভ্যাক্স নামের আরও দুটি ভ্যাকসিন আসছে। এগুলো বেশ ভালো হবে আশা করছি। সে সময় ভ্যাকসিন উৎপাদনেও যেতে পারে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউ থেকে আমদানি করা ভ্যাকসিন বাইরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন।
তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিন বাইরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন যদি সরকার বলে যে, আমরা প্রাইভেট মার্কেটে দিই। প্রাইভেট বলতে হাসপাতাল-ক্লিনিক। আমরা তখন চেষ্টা করে দেখব যে, তাদের জন্য আনতে পারি কিনা। এখন যেটা আসছে, সেটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিকে দেওয়ার পর যদি কিছু থাকে, তা হলে আমরা দু-একটা কোম্পানিকে দিতে পারি। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সব কর্মচারী এবং তাদের পরিবার পাবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ১০ লাখ ডোজও অনেক কম।
এদিকে গতকাল রবিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা আমাদের দিয়েছে ভারত সরকার। চুক্তি অনুযায়ী কাল সোমবার (আজ) আসছে আরও ৫০ লাখ টিকা। এর পর পর্যায়ক্রমে বাকি টিকা আসবে।
পরবর্তী ধাপে আসা টিকা ঢাকাসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোথায় কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, সেটিও ঠিক করা আছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, আগামী ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে নার্সদের থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ভ্যাকসিন কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, সে জন্য আমাদের জাতীয় কমিটি আছে। তারা এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে। অনেক ওষুধেই তো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এ ভ্যাকসিনে যে সেটি হবে না, তা বলতে পারছি না। তবে করোনা ভ্যাকসিনে যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সে জন্য আমরা প্রতিটি হাসপাতালে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছি।
টিকা নেওয়ায় মানুষকে কীভাবে আশ্বস্ত ও আগ্রহী করা হবে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন বিশ্বে রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। এসব ভ্যাকসিন থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক কম হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাজ্যে লাখ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ হয়েছে। তাই এ ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের প্রয়োজন নেই।
জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আগে ফ্রন্টলাইনারদের ভ্যাকসিন দেব। পর্যায়ক্রমে যাদের ভ্যাকসিন লাগবে, তাদের সবাইকে দেওয়া হবে।
আজ সোমবারের টিকা নিবন্ধনের অ্যাপসটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। এ নিয়ে আজ সোমবার বিকালে টিকা ব্যবস্থাপনার জাতীয় কমিটির এক সভা হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে টিকার অ্যাপস, নিবন্ধনের প্রক্রিয়া, টিকা প্রয়োগসহ নানাদিক আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সোমবার ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করছি। এটি আসার পর টঙ্গীতে বেক্সিমকোর যে ওয়্যারহাউস রয়েছে সেখানে নেওয়া হবে। ওয়্যারহাউসগুলো আমাদের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শন করেছেন। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা দেখার দায়িত্ব আমাদের। পুরো বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য আমাদের পাঁচটি টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।